শিখরের গন্ধ মাখা খুশবো ছড়িয়ে দিতে, বাঙালির আত্মপরিচয়ের গৌরবগাঁথা তুলে ধরতে বাংলাদেশ সোসাইটি আঠারোতম বৈশাখী উৎসব পালন করেছে। বৈশাখের আগমনী ধ্ব্নি সূচিত হওয়ার পর থেকে তাকে বরণ করে নিতে এক মাস ধরে চলে প্রস্তুতি। অরল্যান্ডো শহরের শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র “আপনা হল “কে সুসজ্জিত করা হয়েছে বৈশাখী আবরণে।
এ উলেক্ষে শনিবার (৪ মে ২০২৪) দক্ষিণ পশ্চিমের বিশাল পার্কিং স্পেসকে ঘিরে ফেলা হয়েছে একশত দশ ফিট আল্পনা, বৈশাখী উৎসবের চিত্রমালা পোস্টার ব্যানার দিয়ে ও অগণিত স্টল দিয়ে। যা ছিল প্রবাসে স্বপ্নের এক খন্ড উৎসবের বাংলাদেশ।
এর মধ্যে বসেছে মেলা। দেশীয় সামগ্রী শাড়ী চুরি হাজারো রকমের পসরা, খাবারের স্টল, পিঠা, মুড়ি মাখা, জিলাপি, পিয়াজু, বিরানী, কাবাব শত রকমের খাবার। ফ্লাড লাইটের আলোতে আর হুমড়ি খাওয়া নারী পুরুষদের মধ্যে স্টল ওয়ালাদের বেচাকিনা চলে রাত বারোটা পর্যন্ত।
আর অন্যদিকে আপনা হলের মধ্যে চলে সংগীত সন্ধ্যা। পর্বে পর্বে বৈশাখের আগমনী গান, কবিতা, নৃত্য, উপজাতি নৃত্য যাতে তুলে ধরাহয় বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্য, ব্যবহার করা হয় ঢোল বাদ্য কুলা পাখা।
বিশাল আয়োজন বিস্ময়কর অনুভূতি, মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয় পিন পতন হলঘরে। শিশুদের বৈশাখী সাজ প্রতিযোগিতা ছিল অপূর্ব আকর্ষণীয়। প্রায় ত্রিশটিরো বেশী বাচ্চারা অংশ নেয়। মায়েদের উদ্দীপনায় শ্রেষ্ঠ হওয়ার বাসনায় সজ্জিত সোনামনীদের মনে হয়েছে আবহমান বাংলার অপরূপা। কেহ কৃষক, কেহ বধূ, কেহ মুক্তিযোদ্ধা, কেহ বিক্রেতা, কেহ উপজাতি, কতো কি সাজ।
বিজ্ঞ বিচারক ফখরুল আহসান, মাহবুব মিলন, মোঃ শাহিন ও মোয়াজ্জেম ইকবালের তত্ত্বাবধানে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় নির্ধারিত আজান, আদিয়াড ও এলিজা। বিচারকগণ তাদের পুরুস্কৃত করে। এ ছাড়া সকল অংশগ্রহণ কারীদেরও পুরুস্কৃত করে সোসাইটির নেতৃবৃন্দ।
এই অনুষ্ঠান সফলতায় যাদের ভূমিকা অবিস্মরণীয় সোসাইটির সেসব উদ্যোমী সদস্যবর্গ, বিজ্ঞাপন দাতা শুভানুধায়ীদের একে একে মঞ্চে ডেকে পরিচিত ও সম্মান জানায় সভাপতি রুমেল হোসেন এবং সেক্রেটারী মোঃ ইউনুস। তারপরে গুণী শিল্পী ও অতিথী শিল্পীদের নিয়ে রাত আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত চলে বিরামহীন গান। বরণ্য অতিথী শিল্পী রাজীব আর রোখসানা মির্জার অনবদ্ধ গানের তালে তালে ঢোল বাদ্য নিয়ে নর নারী আনন্দ উল্লাসে নৃত্য করতে থাকে।
আজ পথের দূরত্ব ভুলে সমগ্র ফ্লোরিড়া থেকে মানুষ এসেছে নির্মল প্রানান্দে ,বৈশাখী বসনে ভূষণে নববর্ষ যাত্রাকে স্মরণীয় করতে স্বদেশের প্রতিচ্ছবি, নিজস্ব গৌরবগাঁথার সাক্ষী হতে। স্নিগ্ধা লিপির কারুকার্যে আকাশ ছোঁয়া ব্যানার ও সুদীর্ঘ আলপনার স্ফুরণ ছিল সবার মুখে ও মনে। শিল্পীর এই অসাধারণ শিল্পকর্মে মুগ্ধ হয়ে সোসাইটি তাকে লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
নেপথ্যের কর্মবীর যাদের ত্যাগ শ্রমে এই বিশাল আয়োজন আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর হয়েছে তারা হলো শামসুদ তোহা, শাহীদুল ইসলাম বাবু, শাহিদ, জাহাঙ্গীর, মুনির, মারুফ, রফিকুল আলম, সেলিম, নবনী, মিলি, মিজান, মেজবা, মাইনুল, আপেল ও শেলী।
বৈশাখী মেলার সাফল্য, আনন্দ শিহরন জাগানোর মূল ভূমিকায় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি রুমেল হোসেন এবং সেক্রেটারি ইউনুস হোসেনের নেতৃত্ব দক্ষতা প্রশংসার দাবী রাখে। এক টুকরো বাংলাদেশের গন্ধ শুকতে যারা এই উৎসবে এসেছে, তারা ক্ষণিকের তরে এখানে বাল্যের স্বদেশ দেখেছ, অতীতের স্মৃতি ঝালাই করেছে আর নতুনরা জানতে পেরেছে বাংলা সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্য। এটাই এই বর্ষবরণ উৎসবের সাফল্য।